- ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
মুহাম্মদ বাদশা ভূঁইয়া : ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
বুধবার ৬ নভেম্বর সকাল ১০ টায় চাঁদপুর হাজী মহসিন রোডস্থ রসুই ঘর চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে মাওলানা মোঃ আব্দুর রহিম পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৮ বছর পর আমরা অধিকার ফিরে পেয়েছি। হাসিনা সরকার যদি এখনো ক্ষমতায় থাকতো তাহলে গ্রামগঞ্জে, রাস্তাঘাটে ও পাড়া মহল্লায় লাশ আর লাশ দেখতে পেতাম। এই জালিম স্বৈরাচারী হাসিনা চুড়ান্ত পরিনতি বুঝতে পেরে পালিয়ে গেছে। আমরা ছাত্রজনতার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সুন্দর পরিবেশ ফিরে পেয়েছি।
তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর সারা দেশে লগি বৈঠা দিয়ে আওয়ামী লীগ যে তান্ডব চালিয়েছিলো তা পৃথিবীর ইতিহাসে কোন হায়ওয়ান জানোয়ারও এই আরচন করতে পারে না। তারা সেদিন লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে লাশের উপর নৃত্য করেছিলো। এছাড়া তারা বিডিআর এর ৬৪ জন চৌকস সেনা অফিসারকে পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছিলো। শাপলা চত্তরে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নির্মমভাবে হামলা ও গুলি চালিয়ে ছিলো। কত লোক সেখানে মারা গিয়েছে তা আজ পর্যন্ত উদঘাটন করতে পারেনি। দিগন্ত টিভির কাছে সেই তথ্য ছিলো বলে তারা সেদিন দিগন্ত টিভিও বন্ধ করে দিয়েছিলো।
তিনি আরো বলেন, ‘জুলাইয়ের ৩৬ দিন বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রজনতার উপর তা হায়েনার মতো স্বৈরাচারী সরকার ও তার পেটুয়া বাহিনী মানুষ হত্যা করার জন্য যে অভিযান চালিয়েছে তা বিশ্ববাসী দেখেছে। ১৬ শতাধিক মানুষ সরা দেশে তারা হত্যা করেছে। তাদের পৈশাচিকতায় ৩২ হাজারের উপরে মানুষ আহত হয়েছে। কেউ চোখ হারিয়েছে, অনেকে হাত ও পা হারিয়েছে। তারা যে গণহত্যা চালিয়েছে এবং বাংলাদেশে যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা আগামী ৫০ বছরেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না। ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা জীবন দিয়েছে তারা জাতির শেষ্ঠ সন্তান। এরাই আমাদের প্রেরণার উৎস। আল্লাহ যেন তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নেন এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যদেরকে সবর করার তৌফিক দেন এবং কুরআন সুন্নাহ্ ভিত্তিক একটি কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েম করতে পারি সেই চেষ্টা আমাদেরকে চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কত লোক তারা হত্যা করেছে গুম করেছে তার কোন হিসাব নেই। তারা ১৭ বছর ধরে নির্মম জুলুম নির্যাতন চালিছে জনগণের উপর। তারা বিগত ১৭ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল সহ বিবিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকদেরকে গুম ও হত্যা করেছে। তাদের সেই অপরাধের বিচার একদিন এদেশের জনগণ করবে। ’
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অ্যাড. মাসুদুর রহমান বুলবুল সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা অঞ্চলের টিম সদস্য ও ফেনী জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মোঃ লিয়াকত আলী ভুইয়া, জেলা জামায়াতের নবনির্বাচিত আমীর মাওলানা বিল্লাল হোসেন মিয়াজী, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী অ্যাড. মোঃ শাহজাহান মিয়া, চাঁদপুর শহর ছাত্রশিবির সভাপতি মোঃ ফারুক হোসেন, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোঃ মহরম আলী, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা মোঃ আবুল হোসাইন, চাঁদপুর জেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক জেলা সভাপতি মাওলানা মোঃ আবু জাফর, মাওলানা মোঃ ইউনুছ হেলাল, হারুনুর রশিদ ওসমানী, জেলা জামায়াতের অফিস সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, চাঁদপুর সদর উপজলো জামায়াতের আমরি মোঃ নাসির উদ্দিন, সদর উপজেলা সক্রেটারি আফসার উদ্দনি মিয়াজী।
অনুষ্ঠানে শহীদদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিচারণ মূলক বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জামাতে এবং ছাত্রশিবির এর সকল জনশক্তিকে আহ্বান জানান। ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী খুনি শেখ হাসিনা যেন আর দেশে ফিরে আসতে না পারে সেই জন্য তারা দাবি জানান। এসময় শহীদ পরিবারের সদস্যদের কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে ওঠে।
প্রধান অতিথি ১২ জন শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে চাঁদপুর জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা ও উপহার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শহিদীদের স্মরনে সঙ্গিত পরিবেশন করেন হিলশা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ ও মোহনা শিল্পিগোষ্ঠির শিল্পিবৃন্দ।
- ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১.