ঢাকা বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ২০ চৈত্র ১৪৩০
দৈনিক পূর্বাচল: ১৫ ঘণ্টার মধ্যে বান্দরবানের ২ উপজেলার ৩ ব্যাংকে ডাকাতির মধ্য দিয়ে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তাদের অবস্থান আবার জানান দিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আজ ৩ এপ্রিল বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।তিনি বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) হঠাৎ করে শুনলাম পাহাড়ে ব্যাংক ডাকাতির একটা প্রচেষ্টা হয়েছে। আমাদের কাছে যা তথ্য আসছে কুকি-চিন যে গ্রুপটি রয়েছে, যারা আগেও বান্দরবানে একটি জায়গায় অবস্থান করে জঙ্গি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে একটা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল। র্যাব ও আর্মি সেই ঘাঁটি সরিয়ে দিয়েছে। ইদানিং কুকি-চিন আবার বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আইজিপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে অবস্থান করছেন। রুমাতে সোনালী ব্যাংকে ঢোকার আগে বৈদ্যুতিক যে সাব-স্টেশন ছিল সেটাকে বন্ধ করে তারা ব্যাংকের দিকে অগ্রসর হন। সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিলো। পুলিশ ও ব্যাংকের ম্যানেজার সবাই তারাবির নামাজে ছিল। সেই সময় তারা ঢুকে দুই পুলিশকে আহত করে দুটি এসএমজি ও আটটি চাইনিজ রাইফেল লুট করে। উপজেলা কমপ্লেক্সে আনসারদের শটগানগুলোও তারা নিয়ে নেয়।
মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি সশস্ত্র দল রুমাতে সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায়।
সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে ১৪টি অস্ত্র লুট করে এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার দুপুরে থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে ডাকাতি করেছে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সেখানে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলি চালাতে চালাতে ব্যাংক দুটির শাখায় প্রবেশ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
ব্যাংকে ডাকাতির সঙ্গে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ সন্ত্রাসীরা জড়িত বলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের ধরতে এবং অপহৃত ম্যানেজারকে উদ্ধারে যৌথ অভিযানে নেমেছে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কেএনএফ; যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত। তারা নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলের অনগ্রসর জনজাতিগুলোর ‘প্রতিনিধিত্বকারী’ নিজেদের পরিচয় দেয়।
সংগঠনটি একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চায়। যা ‘কুকি-চিন রাজ্যে’ নামে পরিচিত হবে। যেখানে চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরারা থাকবে না। থাকবে বম, খিয়াং, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি ও ম্রোরা।
পাহাড়ে তাদের আস্তানায় জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলো।
সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেলপাড়ায়। রুমার উপজেলা পরিষদ বেথেলপাড়ার কাছেই অবস্থিত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তারা সোনালী ব্যাংকের একটা ভল্ট ভাঙেন, আরেকটা মনে হয় ভাঙতে পারেনি। অফিসিয়াল নিউজ এখনও পাইনি। আমরা যতটুকু শুনেছি, তাই বলছি। সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে জিম্মি করে নিয়ে গেছে। কত টাকা নিয়েছে, সেটা এখনও অফিসিয়ালি আসেনি।
আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, আজকে দিনের বেলায় আমরা দেখলাম, থানছিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে আক্রমণ করেছে। এই অপারেশনটা এখনো চলছে। আমাদের পুলিশ সেখানে গোলাগুলি করছে। সেখান থেকে কত টাকা নিয়েছেন বা ক্ষয়ক্ষতি কী পরিমাণ তা এখন জানাতে পারবো না। এ বিষয়ে আমাদের যা যা করার, আমরা করবো। এখানে যারা জড়িত বা করেছে আমরা সবগুলোর ব্যবস্থা নেবো।
সরকারের যথেষ্ট পরিমাণ ফোর্স রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সেখানে পুলিশ ও বিজিবি রয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে সেনাবাহিনীও যাবে। আর এ বিষয়টি আমাদের কাছে একেবারে নতুন। থানছি একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা। এটা পর্যটকদের জন্য ভ্রমণের মূল জায়গা। রুমাও শান্তিপূর্ণ জায়গা ছিলো, সেখানে বেশকিছু দিন ধরে শান্তি বিরাজ করছিলো। সেই জায়গা তারা কেন বেছে নিলো, সেই সবকিছু দেখার বিষয় রয়েছে। এগুলো দেখে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব, ইনশাআল্লাহ।
ভারতীর সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রসেঙ্গ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে দু’দেশের সঙ্গেই আলোচনা হচ্ছে। সীমান্তে ওই দেশে একটা চক্র রয়েছে, আমাদের দেশেও একটা চক্র রয়েছে। যারা নাকি অবৈধ ব্যবসা করে। দেশের পণ্য ওই দেশে নিয়ে যায়, ওই দেশের পণ্য এদেশে নিয়ে আসে। সীমান্তে যারা থাকেন তারা দুর্ধর্ষ, তাদের দুর্ধর্ষই বলবো, তারা কোনো নিয়মকানুন মানেন না। কখনও ওই দেশে ঢুকে যায়, আবার কখনও এই দেশে চলে আসে। তখন সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে ঘটনা ঘটে যায়।’
সীমান্তে শুধু তো বাংলাদেশের মানুষই হতাহত হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, এটা সঠিক নয়। বাংলাদেশের মানুষ ওই দেশে যখন ঢুকে যায়, তখন ক্যাজুয়ালটি হয়। ওই দেশের মানুষ যখন আমাদের দেশে আসে, আমরা ফলো করি যাতে নিহত না হয়। ওই দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যেন নন লেথাল অস্ত্রগুলো (প্রাণঘাতী নয়) ব্যবহার করে, যাতে ক্যাজুয়ালিটি না হয়। ঢাকা বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ২০ চৈত্র ১৪৩০.