নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। পদপদবীর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তাদের কেউ কেউ। এর মধ্যে অন্যতম আনোয়ার হোসেন ওরফে সোর্স আনোয়ারের নামে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ এক ডজন মামলা রয়েছে।
জানা যায়, ২০২১ সালে সিএমপি পুলিশের করা ৩২৩ সন্ত্রাসীর তালিকা এবং কিশোর গ্যাংয়ের কথিত বড় ভাইদের নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে গা ঢাকা দেয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। নগর পুলিশের করা ওই তালিকায় ১৬ থানার মধ্যে সর্বোচ্চ অপরাধী রয়েছে বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকায়। ৩২৩ অপরাধীর মধ্যে শুধু বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় রয়েছে ৮৫ জন। তালিকার অন্যতম সদস্য আনোয়ার হোসেন ওরফে সোর্স আনোয়ার বর্তমানে ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য পদের জন্য জোর তদবীর শুরু করেছেন। অথচ এই আনোয়ারের নামে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ১২টি মামলা রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কথা রয়েছে। আনোয়ারকে কমিটিতে নিতে তারই ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ইতোমধ্যে আ.লীগের পদস্থ কতিপয় নেতার সঙ্গে কয়েক দফা মিটিংও হয়েছে বলে একটা সূত্র জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বয়োজ্যেষ্ঠ জানান, এক সময়ে বায়েজিদের অপরাধের নেপথ্যের মূল হোতা ছিল সোর্স আনোয়ার। সোর্স আনোয়ার ও তার বাহিনীর গুলির শব্দে এলাকাবাসীর ঘুম ভাঙতো। তাদের নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞ ছিল খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও জায়গা দখলবাজি। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল এলাকাবাসী। এমনকি তার অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর করে অভিযোগ দিয়েছে পুলিশ কমিশনার বরাবর। তারপর থেকে কিছুটা গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও এখন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে পদ পেতে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো কিছুদিন নীরব থাকার পর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একাধিক গ্রুপের মধ্যে এর আগেও সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দলের জন্য নয়, মূলত নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে পদ পদবীর জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে একাধিক মামলার আসামি ও তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।
এদিকে কুলগাঁও এলাকায় অবস্থিত বালুছরা বিজুয়াল গার্মেন্টসের ব্যবসায়ীক পার্টানার ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. বেলাল, যুবদলের সভাপতি মো. আলী ও আব্দুল করিম। করিমও এখন পদপদবীর জন্য মরিয়া। তাকে কমিটিতে নিতে উচ্ছপদস্থ বিভিন্ন নেতাদেরকে তদবীর করে আসছে বলে একটা সূত্র জানিয়েছে। অথচ দলের নির্দেশনা রয়েছে, জামাত-বিএনপির লোক কোনভাবেই যেন দলে প্রবেশ করতে না পারে। আব্দুল করিম ও আনোয়ার হোসেনদের মতো লোক দলে অন্তর্ভূক্ত হলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে গিরে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীরা।
জানতে চাইলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত, ওয়ারেন্টভুক্ত এবং বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলমান রয়েছে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সভাপতি কাজী শাহাজাদা মালেক বলেন, কোন দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী অথবা বিএনপি-জামাত সংশ্লিষ্টদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে না। যোগ্যতা বিবেচনা করে সাংগঠনিক নীতিমালা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী সদস্য অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। তাদের বিষয়গুলো আমরা অবগত ছিলাম না। খোঁজ নিয়ে দেখি, যদি এধরণে কর্মকাণ্ডের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।